×
এক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অবস্থায় অন্যত্র চাকুরী গ্রহন করার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী শর্ত কতটুকু কার্যকর এই প্রশ্নটা অনেকের মনেই জাগে। যেমন, রিমা নামের একটি মেয়ে পার্লারে চাকুরী নিলো। তার সাথে পার্লার কর্তৃপক্ষ যে চুক্তি করলো তাতে বলা হলো সে যতদিন এই পার্লারে কাজ করবে ততদিন অন্যকোন পার্লারে কাজ করতে পারবে না এবং চাকুরী ছাড়লে আসে পাশের কোন পার্লারে সে চাকুরী নিতো পারবে না। নিরুপায় হয়ে রিমা শর্তটি মেনে চাকুরী নিলো।
আসলে এটা শ্রমজীবী বা পেশাজীবী মানুষ যখন কোথায় চাকুরী নেয় তখন অনেক সময় প্রতিষ্ঠান একটি শর্তজুড়ে দেয় যে সে আর কোথাও সেবা প্রদান করতে পারবে না বা কাজ করতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রে চাকুরীর পরও এই শর্ত কার্যকর থাকে। কিন্তু
আসলে এ ধরনের শর্তগুলো কতটুকু কার্যকর?

চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ধারা ২৭ এ বলা হয়েছে যে সম্মতি, কারও আইনসম্মত পেশা, বাণিজ্য বা কোনো ব্যবসায়ের জন্য যতদূর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে উহা ততদূর বাতিল।

তবে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম যিনি বিক্রি করেন, তিনি তার ক্রেতার সাথে এই মর্মে চুক্তি করতে পারেন যে, যতদিন ক্রেতা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় উক্ত ব্যবসায় পরিচালনা করেন, ততদিন সুনাম বিক্রেতা ঐ এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকবেন।
এই ধারা অনুযায়ী চাকুরী ও ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন কোন শর্ত আরোপ করা যাবে না। তবে প্রতিবন্ধকতা কি সেটা আমাদের বোঝতে হবে।

২০০৬ সালে উইপ্রো লিমিটেড বনাম ব্যাকম্যান কল্টার মামলায় [Wipro Limited vs Coulter, 2006(3) ARBLR 118, Delhi ] দিল্লি হাইকোর্ট এই আইনের প্রয়োগের বিশদ ব্যাখ্যা দেন।
আদালত বলেন এই ধারার অধীনে নিচের চারটি পয়েন্ট সুস্পষ্ট:

ক) চাকুরী, অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য বা এজেন্সির ক্ষেত্রে নেতিবাচক চুক্তি যদি একটি চলমান চুক্তির অংশ হয় হয় তবে তা সাধারনত বাণিজ্য, পেশা বা ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা বলা যাবে না, যদি না তা বিবেকবর্জিত বা একপাক্ষিক হয়।

খ) কর্মকর্তা ও কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যকার যে নেতিবাচক চুক্তি যা চাকুরী শেষ হবার পরও চলমান থাকে যার ফলে কর্মে নিয়োজিত তার কর্মকর্তা যে ক্ষেত্রে কাজ করেন সেরকম ক্ষেত্রে কাজ করতে পারবেন না বা ব্যবসা করতে পারবেন না সে চুক্তি বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য হবে এবং নেতিবাচক চুক্তির অংশ বাতিল হবে।

গ) আদালত যখনই একটি প্রতিবন্ধকতামূলক বা নেতিবাচক চুক্তি বিবেচনা করে এবং সেটি বানিজ্যের প্রতিবন্ধকতা কিনা তা বিবেচনা করে তখন কর্মকতা ও কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যকার চুক্তিতে অন্য চুক্তির ক্ষেত্র যেমন অংশীদারিত্ব চুক্তি, ফ্রেঞ্চাইজ চুক্তি, এজেন্সি ও ডিস্ট্রিবিউটর চুক্তি, বানিজ্য চুক্তির চেয়ে বেশি কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করে। এটি করা হয় মূলত এজন্য যে বানিজ্যিক আকারের চুক্তিতে দুপক্ষ কম বেশি সমান জায়গায় থাকে কিন্তু কমকর্তা ও কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির চুক্তির ক্ষেত্রে সাধারনত কর্মকর্তা বেশি সুবিধাজনক জায়গায় থাকেন। প্রায়ই দেখা যায় কর্মকর্তা একটি আদর্শ নমুনা ফর্মে স্বাক্ষর দেয়, আর না দিলে সে চাকুরীটি গ্রহন করতে পারে না।

ঘ) reasonableness বা যৌক্তিকতার প্রশ্ন বা প্রতিবন্ধকতা আংশিক না সম্পূর্ন এই গুলো বানিজ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছেকিনা তা নির্ধারনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় নয়।

তাই রিমা যতদিন পার্লারে চাকুরী করবে ততদিন শর্তটি কার্যকর এবং বানিজ্য বা কর্মের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হবে না কিন্তু চাকুরী ছেড়ে দেবার পর বা চাকুরী শেষ হবার পর এই শর্ত বাতিল হবে।