৫৩(ক) ধারার বিবৃতআংশিক সম্পাদন নীতি প্রয়োগের জন্য মূলত দুইটি উপাদান আবশ্যক । এগুলি হচ্ছে একটি হস্তান্তর চুক্তি এবং এই চুক্তি আংশিকভাবে পালন। এগুলো বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত উপাদানগুলো পরিলক্ষিত হয় -
হস্তান্তর চুক্তি :
১. আংশিক সম্পাদন নীতি প্রয়োগের জন্য প্রথমত একটি সম্পত্তি হস্তান্তরের চুক্তি থাকতে হবে।
২. এই চুক্তি অবশ্য স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত হবে। অস্থাবর বা অন্য প্রকারের সম্পত্তি হলে চলবে না।
৩. এই চুক্তিটি মূল্যের বিনিময়ে বা উপযুক্ত প্রতিদানের বিনিময়ে হতে হবে। দান বা প্রতিদানবিহীন চুক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
৪. এই চুক্তিটি লিখিত হতে হবে। মৌখিক চুক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
৫. হস্তান্তরকারী কর্তৃক বা তার উপযুক্ত প্রতিনিধি কর্তৃক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হবে।
আংশিক পালন :
৬. হস্তান্তর গ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তির দখল গ্রহণ করতে হবে।
৭. দখল গ্রহণ অবশ্য চুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ তার দখল চুক্তির সাথে আংশিক সম্পাদন হিসেবে গণ্য হতে হবে।
৮. চুক্তি অনুযায়ী হস্তান্তর গ্রহীতা তার নিজ দায়িত্ব সম্পূর্ণ পালন করবে বা পালন করতে ইচ্ছুক থাকতে হবে।
এরুপ চুক্তি অথবা এর আংশিক সম্পাদন সম্পর্কে অবহিত হয়ে যদি কেউ উপযুক্ত প্রতিদানের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি খরিদ করে তবে এই ধারার কোনো বিধান হস্তান্তর গ্রহীতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে না।
(খ) ৫৩(ক) ধারার অনুবিধির পরিসর: সম্পত্তি হস্তান্তরের চুক্তি দ্বারা পক্ষগণের উপর বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে মাত্র, সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার সৃষ্টি করে না। উভয় পক্ষের চুক্তি পালন সম্পূর্ণ হলে, অর্থাৎ হস্তান্তর সম্পূর্ণ হলে সম্পত্তির উপর গ্রহীতার অধিকার জন্মায়। চুক্তি রেজিস্ট্রি না হবার কারণে অর্থাৎ পদ্ধতিগত অসম্পূর্ণতার কারণে গ্রহীতাকে যেন অসুবিধায় না ফেলা হয় তার জন্য ৫৩(ক) ধারার প্রবর্তন। এই ধারা গ্রহীতাকে আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছে, যে অধিকার হস্তান্তরকারী বা তার অধীনস্ত অন্যান্য দাবিদার সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু আংশিক সম্পাদনের বিষয় না জেনে মূল্যের বিনিময়ে চুক্তি সম্পাদনকারীর বিরুদ্ধে এ অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ৫৩(ক) ধারার এ অনুবিধির প্রয়োগ খুবই সীমাবদ্ধ। কারণ হস্তান্তর আইনের ৩ ধারায় নোটিশের ২ নম্বর ব্যাখ্যায় বিধান রাখা হয়েছে যে, প্রকৃত দখল কোনো ব্যক্তির জন্য প্রকৃত দখলকারীর স্বত্বের নোটিশ হিসেবে গণ্য হবে। কাজেই আংশিক সম্পাদন মূল্যে কোনো গ্রহীতা যদি সম্পত্তির প্রকৃত দখলে থাকে তবে অন্য কেউ মূল্যের বিনিময়ে উক্ত সম্পত্তির হস্তান্তর গ্রহীতা হতে পারে না, যদি সে ব্যক্তি আংশিক সম্পাদন সম্পর্কে অবহিত না থেকে থাকে।
(গ) ৫৩(ক) ধারা পরোক্ষ ইকুইটি, প্রত্যক্ষ ইকুইটি নয়: ৫৩(ক) ধারায় যে আংশিক সম্পাদন নীতির প্রবর্তন করা হয়েছে, তা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা মাত্র। এই ধারা বলে বাদী হয়ে মামলা করা যায় না। কিন্তু উচ্ছেদের মামলাত বিবাদী হিসেবে দখল রক্ষা করা যায়।
ইংল্যান্ডে একটি ভূমি বিক্রির চুক্তি সম্পূর্ণ হবার সাথে ক্রেতা ঐ সম্পত্তির উপর ইকুইটিগত স্বার্থ (Equitable Interest) অর্জন করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি পালনের জন্য অপর পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। কিন্তু ৫৩(ক) ধারাটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি থাকা এবং গ্রহীতা সম্পত্তির দখলে থাকা সত্ত্বেও সম্পত্তিতে তার স্বত্ব অর্জিত হয় না। তবে এই ধারা বলে সে তার দখল বহাল রাখতে পারবে। বিক্রেতা যদি দখলে থাকে, তবে শুধু বিক্রয়চুক্তির কারণে তাকে দখলচ্যুত করা যাবে না, কিংবা সম্পত্তি ভোগ দখল করা হতে নিবৃত্ত রাখা যাবে না। ইংল্যান্ডের প্রত্যক্ষ - ইকুইটির মতো চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে পালন করার জন্য গ্রহীতা অত্র ধারায় মামলা করতে পারব না। যদিও ইকুইটির নীতিমূলে তার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে কিন্তু ইকুইটির প্রত্যক্ষ তৎপরতা এখানে অনুপস্থিত। তাই নিজ অধিকার বলে গ্রহীতা মামলা করতে পারে না।
ভবিষ্যতে চুক্তিটির সুনির্দিষ্ট সম্পাদন হবে এই প্রত্যাশায় যদি হস্তান্তর গ্রহীতা মূল্য সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধ করে এবং দখল নেয়, তবে এই ধারা বলে সে দখল বহাল রাখতে পারবে। মূল্য পরিশোধের জন্য নির্ধারিত তারিখে যদি হস্তান্তরকারী মূল্য গ্রহণ করে এবং হস্তান্তর গ্রহীতা যদি পূর্বের মতো দখল অব্যাহত রাখে তবে এই ধারা বলে সে দখল সমুন্নত রাখার অধিকারী হয়। এ হোসেন সরদার বনাম বাংলাদেশ সরকার [১ বি. সি আর ১৯৮, ৪০৬] মামলায় আদালত এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, চুক্তির আংশিক সম্পাদনের পর বিক্রেতা বা তার উত্তরাধিকারীদেরকে উক্ত সম্পত্তি নিয়ে কারবার করতে দেয়া যায় না, যদি ক্রেতা চুক্তিতে তার কর্তব্য পালন করে এবং চুক্তিমূলে দখল নেয়।
এম, এম, ইস্পাহানি লিঃ বনাম ডেপুটি কাস্টোডিয়ান অব এনিমি প্রপার্টি [২০. ডি. এল. আর. (ঢাকা) ৪৯৩] মামলাতে আদালত সিদ্ধান্ত দেন যে, আইনসঙ্গত চুক্তিমূলে দখলে আছে এমন কোনো দখলকারীকে উচ্ছেদ করা যাবে না, যতক্ষণ না তার দখল বেআইনি হয়। অবশ্য যদি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় কিংবা চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটে তবে গ্রহীতা সম্পত্তির দখলে থাকলেও এই ধারার সুযোগ সে গ্রহণ করতে পারবে না। চুক্তির পরিসমাপ্তির পর এবং এ চুক্তির কথা জেনেও যদি উক্ত সম্পত্তি খরিদ করে তবে ৫৩(ক) ধারায় অনুবিধির শর্ত সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
এ সকল কারণে বলা যায় যে, ৫৩(ক) ধারাটি যদিও ইকুইটি নীতি হতে সংগৃহীত হয়েছে তবুও এটি প্রত্যক্ষ ইকুইটি নয়, পরোক্ষ ইকুইটি মাত্র।
যেহেতু এই নীতিটি একটা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা মাত্র; সেহেতু বলা হয় যে, এটা ঢাল হিসেবে ব্যবহ্রত হতে পারে, তরবারি হিসেবে নয়।