উন্নয়নের একটি অংশ হচ্ছে বহুমুখি রপ্তানি বৃদ্ধি করা। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমাজের মানুষের উন্নয়ন তখন ই সম্ভব হয় যখন উক্ত দেশ থেকে যতবেশি পণ্য রপ্তানি যোগ্য হয়ে উঠবে সেদিকের সকল সুযোগ সুবিধা সহজ স্বাধ্য করা সম্ভব হয়।বর্তমানে অনেক বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে এবং বাংলাদেশের প্রচুর পণ্য আছে যা রপ্তানিযোগ্য তাই বলা যায় বাংলাদেশ রপ্তানীতে খাতে একটি সম্ভাবনার দেশ।
আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৫০ এর ৩(১) ধারার ক্ষমতা বলে সরকার রপ্তানি নীতি ২০১৮ -২০২১ জারী করেন।
উৎপাদন ও সরবরাহ স্তর, রপ্তানির ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় অবদান আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা সর্বোপরি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অবদান রাখার সক্ষমতা বিবেচনায় এনে কতিপয় পণ্য কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত এবং অন্য কতিপয় পণ্য কে বিশেষ উন্নয়ন মুলক খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সরকার কর্তৃক সব সময় তালিকা পরবর্তন এবং এ সকল পণ্য গুলো রপ্তানিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যাবে।
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত -
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত বলতে সে সব খাত কে বুঝাবে যেখানে রপ্তানীর বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে অথচ বিবিধ কারনে এই সম্ভাবনাকে তেমন কাজে লাগানো যায় নি।তবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে অধিকতর সাফল্য অর্জন সম্ভব যেমন -
- অধিকমুল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক, ডেনিম এবং এক্সেসরিস
- সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস, আইসিটি পণ্য
- ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য
- প্লাস্টিক পণ্য
- জুতা( চামড়াজাত, অচামড়াজাত ও সিনথেটিক) এবং চামড়াজাত পণ্য
- পাটজাত পণ্য
- এগ্রো - প্রোডাক্ট, এগ্রোপ্রোডাক্টস পণ্য
- জাহাজ ও সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার নির্মাণ
- ফার্নিচার
- হোম টেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল
- হোম ফার্নিশিং
- লাগেজ এবং
- একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস্ ( এপিআই) ল্যাবরেটরী বিকারক ( রিয়েজেন্ট)
বিশেষ উন্নয়ন মুলক খাত -
- যে সকল পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে অথচ পণ্য গুলোর উৎপাদন, সরবরাহ এবং রপ্তানি ভিত্তি সুসংহত নয় সে সকল পণ্যের রপ্তানি ভিত্তি সুদৃঢ়করনের লক্ষ্যে বিশেষ উন্নয়ন মুলক খাতের অর্ন্তভুক্ত করা হবে
যথা -
- বহুমুখি পাটজাত পণ্য
- ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য
- সিরামিক পণ্য
- লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য ( অটো-পার্টস, বাইসাইকেল, মটর সাইকেল, ব্যাটারী
- মুল্য সংযোজিত হিমায়িত মৎস্য
- পাঁপড়
- প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং
- কাটিং এন্ড পোশিসকৃত মসৃন হীরা ও জুয়েলারি
- পেপার ও পেপার প্রোডাক্টস
- রাবার
- রেশম সামগ্রী
- হস্ত ও কারু পণ্য
- লুংগি সহ তাঁত শিল্প জাত পণ্য
- নারকেলের ছোবড়া
- ফটোভলটিক মডিউল ( সোলার এনার্জি)
- কাজুবাদাম ( কাচা ও প্রক্রিয়াকৃত)
- জীবন্ত ও প্রক্রিয়াজাত কাঁকড়া
- খেলনা ( Toy)
- আগর
রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা
১/ প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্ভুত পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য যেমন ঃ ন্যাপথা, ফারনেস অয়েল, লুবিক্যান্ট অয়েল, বিটুমিন, কনডেনসেট, এমটিটি ও এমএস) ব্যাতিরেখে সকল পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য। তবে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট - এর আওতায় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তি মোতাবেক তাদের হিসাবের পেট্রোলিয়াম ও এলএনজি রপ্তানির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
২/ রপ্তানি নিষিদ্ধ ও শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্য ব্যতিত ব্যক্তিগত মালামালের অতিরিক্ত হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি ২০০(দুই শত) মার্কিন ডলার মুল্যমানের পণ্য কোন যাত্রী বিদেশে যাওয়ার সময় একোম্প্যানিড ব্যাগেজে সংগে নিতে পারবেন। এরুপ বিদেশে নেয়া পণ্যের বিপরীতে শুল্ককর প্রত্যপর্ণ / সমন্বয়, ভর্তুকি ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা প্রদানযোগ্য হবে না।
- পাটবীজ ও শনবীজ
- চাল( সরকার হতে সরকার পর্যায়ে চাল এবং সুগন্ধি চাল ব্যতিত)
- ২০১২ সালের বন্যপ্রানী ( সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ( ২০১২ সনের ৩০ নং আইন) এর ধারা ২৯ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ----
- বহির্গমন শুল্ক বন্দর ব্যতিত অন্য কোন পথে
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাইটিস (CITES) সার্টিফিকেট ব্যতিত এবং
-লাইসেন্স ব্যতিত
( কোন বণ্য প্রানী বা তার অংশ, ট্রফি, অস্পূর্ণ ট্রফি, অথবা তফসিল ৪ এ উল্লেখিত উদ্ভিদ বা তার অংশ বা তা হতে উৎপন্ন দ্রব্য রপ্তানি বা পুনঃ রপ্তানি করতে পারবেন না)
- আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ
- তেজষ্ক্রিয় পদার্থ
- পুরাত্বাত্তিক দুর্লভ বস্তু
- মনুষ্য কংকাল অথবা মনুষ্য অথবা মনুষ্য রক্ত দ্বারা উৎপাদিত অন্য কোন সামগ্রী
- সকল প্রকার ডাল ( পক্রিয়াজাত ডাল ব্যতিত)
-চিল্ড, হিমায়িত এবং প্রক্রিয়াজাত ব্যতিত অন্যান্য চিংড়ী
- পেঁয়াজ, রসুন ও আদা
- সকল প্রকার প্রক্রিয়াকৃত ৬১/৭০ কাউন্ট /পাউন্ড এর চেয়ে ছোট আকাড়ে গলদা চিংড়ী ( Macrobrachium rosenbergii)
- ৭১/৯০ কাউন্ট / পাউন্ড এর ছোট আকারে বাগদা চিংড়ী ( penaeus monodon)
-১০০/২০০ কাউন্ট / পাউন্ড এর চেয়ে ছোট আকারের হরিণা খড়খড়ে বা ব্রাউন ( Metapenaeus monoceros) সাদা বা ইয়েলো ( Metapenaeus brevicornis) চাকা বা হোয়াইট ( Fenneropnaeus indicus) বাগতারা বা ক্যাট টাইগার বা রেইনবো
- বেত, কাঠা ও কাঠের গুড়ি / স্থুল কাষ্ঠ খন্ড ( এই সব দ্বারা প্রস্তুতকৃত হস্তশিল্প সামগ্রী ব্যতীত)। তবে বনশিল্প কর্পোরেশন এর রাবার কাঠ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় অবস্থিত ফার্নিচার শিল্পের উপাদান হিসেবে রপ্তানি করা যাবে যা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি হিসেবে বিবেচিত হবে। উক্ত ফার্নিচার শিল্প সমূহকে বর্ণিত কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত ফার্নিচার রপ্তানি হিসাব সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নিকট দাখিল করতে হবে
- সকল প্রজাতির ব্যাঙ ( জীবিত বা মৃত) ব্যাঙের পা
- কাঁচা ওয়েট - ব্লু চামড়া। তবে ওয়েট- ব্লু চামড়া হতে প্রাপ্ত উপজাত যথা - ওয়েট- ব্লু স্পলীট লেদার রপ্তানি হইবে।
শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিপন্যে তালিকা
- সয়াবিন তেল,পাপ অয়েল
- ইউরিয়া ফার্টিলাইজার - কাফকো, ব্যতীত অন্যান্য ফ্যাক্টরীগুলিতে প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া, ফার্টিলাইজার শিল্প মন্ত্রনালয়ের অনুমতির ভিত্তিরে রপ্তানি করা যাবে
- বিনোদন মুলক গান, নাটক,ছায়াছবি, প্রামাণ্য চিত্র ইত্যাদি অডি ও ক্যাসেট, ভিডিও ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি ফর্মে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে রপ্তানি করা যাবে
- প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্ভুত পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য ( যথা- ন্যাপথা, ফারনেস, অয়েল, #বিটুমিন, কনডেন সেট, এমটিটি ও এমএস) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনাপত্তি সাপেক্ষে রপ্তানিকরা যাবে। তবে কোন প্রকার শর্ত ব্যতিরেখে লুব্রিকেটিং #ওয়েল রপ্তানি করা যাবে এবং এ ক্ষেত্রে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে রপ্তানির পরিমান বিষয়ক অবগত করতে হবে।
- রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আইন, ২০০৬ এর তফসিল ১,২ ও ৩ এ বর্ণিত রাসায়নিক দ্রব্যাদি উক্ত আইনের ৯ ধারা বিধান মোতাবেক রপ্তানি নিষিদ্ধ বা রপ্তানি যোগ্য হবে
- চিনি
-ইলিশ মাছ
- সুগন্ধি চাল
- বাংলদেশে চাহিদা নাই এমন মোটা দানার মুগ ডাল
- গবেষণার উদ্দেশ্যে রক্তের প্লাজমা
- বানিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যক্তিগত বা যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত খামারের উৎপাদিত কুমিরের কাঁচা চামড়া ও মাংস পরিবেশন ও বন মন্ত্রনালয়ের সম্মতি / অনাপত্তির ভিত্তিতে বানিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানির অনুমতি প্রদান করবে।
- ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর স্বীকৃত ব্যাটারি রি- সাইক্লিং প্লান্ট হতে উৎপাদিত Re- melted lead রপ্তানিযোগ্য হবে।
- ওজনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য ( নিয়ন্ত্রন) বিধিমালা, ২০০৪ ও পরবর্তী সংশোধনসমুহ অনুসরণ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে রিকভারি, রিক্লেইমিং বা রিসাইক্লিংকৃত ওজনস্তর ক্ষয়কারী পণ্যে রপ্তানীযোগ্য হবে
- বন্ডের ওয়্যারহাউজ সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত চামড়া ইটিপির মাধ্যমে তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করন করতঃ পুনঃরপ্তানি করা যাবে।
- বালু
উদ্যোক্তাদের অনেকেই এই ধরনের কার্যক্রম সম্পর্কে হয়ত অবগত নয়। তাই যে যেই কাজে দক্ষ সে তার দক্ষতাকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে এবং সঠিক গাইড লাইন মেনে নিজেদের বিজনেস বা উদ্যোগকে প্রসার করতে পারলে আশা করা যায় বাংলাদেশ স্বপ্নের সম্ভাবনাময় দেশে রুপান্তর হওয়া সময়ের দাবি এবং বলা যায় স্ব স্ব ক্ষেত্রের সহযোগিতায় একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।