×

সমবায় সমিতির ইতিহাস


সমবায় সমিতির আবির্ভাব ঘটে সপ্তাদশ শতাব্দীতে। শিল্প বিপ্লবের সময় এই ধারনার ও জন্মের  ভীত তৈরী হতে থাকে। ১৭৫২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন ফ্রান্কলিন সর্বপ্রথম সমবায় সমিতি গঠন করেন। পরবতীতে আরো কিছু সমিতি গড়ে ওঠতে থাকে।১৮৩০ সালের দিকে বেশ কিছু সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে। সমিতি গুলো প্রথম দিকে সফলতার মুখ দেখলেও বেশির ভাগগুলো আস্তে আস্তে মুখথুবড়ে পড়তে শুরু করে। তবে সেই সময়ের লকহার্স্ট লেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোঅপারেটিভ সোসাইটি  এবং গ্লাসশিলস এবং হাওউইক কো অপারেটিভ সোসাইটি এখনো সচল ভাবে কাজ করছে। বৃটেনে সমবায় সমিতির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৮৪৪ সালে বৃটেনের রচডেল নামক জায়গায় ২৮ জন তাঁতী মাত্র ২৮ পাউন্ড পুঁজি সংগ্রহ করে এই সমিতি গড়ে তোলে। 

এরপর জার্মানিতে কৃষক য়সমবায় সমিতির সৃষ্টি হয়।

রবার্ট ওয়েনকে কো অপারেটিভ আন্দোলনের  জনক বলে ধরে নেয়া হয়। তিনি কটন ট্রেডিং এ নিজের ভাগ্য যাচাই করলেন। তিনি তার কর্মীদের  ভালো পরিবেশ দেয়া ও কর্মী ও তাদের সন্তানদের জন্য যদি শিক্ষার ব্যবস্থা করার কৌশলে বিশ্বাস রাখতেন। এর ফলে প্রথম সমবায় সমিতি দোকান খোলা হয়। এর ফলশ্রুতিতে তিনি " ভিলেজ অব কো অপারেশন " নামে একটি উদ্যোগ নিলেন যাতে কর্মীরা নিজেদের খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে পারে, নিজেদের কাপড় তৈরী করতে পারে, নিজেদের জন্য নওয়ম শৃঙ্খলা তৈরী করতে পারে।

পাক - ভারত উপমহাদেশে ১৮৯৫ সালে ফ্রেডরিক নিকলস্ নামক এক ইংরেজ কর্মকর্তার নেতৃত্বে সমবায় সমিতির আবির্ভাব ঘটে। তার প্রচেষ্টায় ১৯০১ সালে সমবায় সমিতি প্রবর্তনের জন্য বিভিন্ন  আইনের সুপারিশ হলে ১৯০৪ সালে সর্বপ্রথম সমবায় আইন চালু হয়। পরে আবার ১৯১২ সালে আইনটিকে নতুন করে প্রবর্তন করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির  পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৪০ সালে সমবায় আইনের স্বীকৃতি প্রদান করেন। স্বাধীনতা লাভ করার পর বাংলাদেশে নতুন করে সৃবায় আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। তখনও ১৯৪০ সালের সমবায় আইন ও ১৯৪২ সালের সমবায় বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হতো। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ১ নং অধ্যাদেশ বলে সমবায় সমিতি অধ্যাদেশ ১৯৮৪ জারি করা হয় এবং ১৯৪২ সালের বিধির পরিবর্তে সমবায় সমিতি ১৯৮৭ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সমবায় বিধি সংশোধন হয়ে সমবায় বিধি ২০০৪ অনুযায়ী ২০০১ সালের সমিতি আইন এবং সংশোধিত সমবায় নীতি ২০০৩ এর পরিবর্তে সমবায় নীতি ২০১০ বলে বর্তমানে সমবায় সমিতি গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

১৯৭১ সাল থেকে দু ধরনের নীতির উপস্থিতি  দেখতে পাওয়া যায়।১) সমবায় বিভাগের অধীনে চিরায়ত সমবায় ২) সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে দুই স্তর বিশিষ্ট নতুন সমবায় সমূহ। বর্তমানে বাংলাদেশে ১,৯০,৩৬০ টি সমবায় সমিতি আছে।যার মধ্যে ২২ টি জাতীয় পর্যায়ের, ১১৬০ টি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এবং ১৮৯১৮১ টি প্রাথমিক পর্যায়ের সমবায় সমিতি।


সমবায় সমিতির প্রকারভেদ


 সমবায় সমিতি আইন ২০০১ এর ধারা ৮ চার ধরনের সমবায়ের কথা বলা আছে। 


প্রাথমিক সমবায়: 

প্রাথমিক সমবায় হলো এমন একটি সমবায় যার সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন একক ব্যাক্তি এবং যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈধ উপায়ে সমিতির সদস্যদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। তবে জমি বন্ধক নিয়ে ঋণ দেয়ার জন্য গঠিত হলে ঐ সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংক নামেও অভিহিত হবে। 


কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি:


এমন একটি সমবায়   সমিতি  যার সদস্য হচ্ছে কমপক্ষে ১০টি সমবায় সমিতি এবং যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ সদস্য সমিতিগুলোর  কাজকর্ম সুষ্ঠভাবে পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং সমন্বয় সাধন। তবে জমি বন্ধকী ব্যাংক নামক প্রাথমিক সমবায় সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি জমি বন্ধকী ব্যাংক নামেও অভিহিত হবে। 


জাতীয় সমবায় সমিতি :  

এমন একটি সমবায় সমিতি যার সদস্য হচ্ছে একই উদ্দেশ্য গঠিত কমপক্ষে ১০ টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি এবং যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সারা দেশ ব্যাপী  উক্ত সদস্য সমিতিগুলোর  কাজকর্ম সুষ্ঠভাবে পরিচালনায় সহায়তা করা এবং  সমন্বয় সাধন ।


জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন:

এমন একটি সমবায় সমিতি যার সদস্য হচ্ছে কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমবায় সমিতি। 


তথ্যসূত্র:


http://www.coop.gov.bd/site/page/77e5c950-c266-474c-9752-49738a216dfa/At-a-glance http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8