আমাদের দেশে নারীরা ক্রমাগতভাবে অধিক সংখ্যক অর্থনোতিক কর্মকান্ডে অবদান রাখছে। গার্মেন্টস শিল্প আমাদের দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । বর্তমান গার্মেন্টস শিল্পেই ৪০ ভাগ শ্রমিক কাজ করছে যার প্রায় ৭৫% নারী।
আইনগতভাবে একজন পুরুষ শ্রমিক যে সমস্ত অধিকারভোগ করে থাকেন নারীশ্রমিকদেরও সেসমস্ত অধিকারভোগ করার অধিকার আছে। কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্যসহ যেকোনধরণের বৈষম্য আইনতঃ নিষিদ্ধ।তথাপি প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই নারীরা বহুধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একজন শ্রমিক হিসাবে নারীশ্রমিক শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য দেশের সকল আইন গত অধিকার ভোগ করতে পারে এছাড়াও নারী শ্রমিকের কিছু বিশেষ অধিকার ও নিশ্চিত করা হয়েছে যেমনঃ
নারীশ্রমিকের প্রসূতিকালীন সুবিধা ও মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারঃ
এক জন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটজনক সময় হচ্ছে প্রসূতিকালীন সময়। নারীর জন্য এ সময় বিশ্রাম বিশেষ যত্ন খাদ্যওপুষ্টি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।সমাজের সকল নারীর মত শ্রমজীবী নারীর ও নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভকালীন সময়ের বিশেষযত্ন ও বিশ্রাম প্রয়োজন। শ্রমআইন অনুযায়ী অন্ততঃ পক্ষে ৬মাস একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকলে যেকোন নারী শ্রমিক পূর্ণ মজুরিতে বাচ্চা প্রসবের আগের আটসপ্তাহ ও পরের আটসপ্তাহ মোট ষোল সপ্তাহ প্রসূতিকালীন ছুটি পাবেন।
প্রসূতিকালীন ছুটি সম্পর্কিত শ্রমআইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমূহঃ
ধারা৪৫। কতিপয় ক্ষেত্রে মহিলাশ্রমিকের কর্মে নিয়োগ নিষিদ্ধঃ
(১) কোন মালিক তাহার প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোন মহিলাকে তার সন্তানপ্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আটসপ্তাহের মধ্যে কোন কাজ করাতে পারবেন না।
(২) কোন মহিলা কোন প্রতিষ্ঠানে তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আটসপ্তাহের মধ্যে কোন কাজ করতে পারবেন না।
(৩) কোন মালিক কোন মহিলাকে এমন কোন কাজ করার জন্য নিয়োগ করতে পারবেন না যা দুষ্কর বা শ্রম-সাধ্য অথবা যার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হয় অথবা যা তার জন্য হানি কর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,
যদি, (ক) তাহার এই বিশ্বাস করার কারণ থাকে, অথবা যদি মহিলা তাকে অবহিত করে থাকেন যে, দশসপ্তাহের মধ্যে তার সন্তান প্রসব করার সম্ভাবনা আছে;
(খ) মালিকের জানা মতে মহিলা পূর্ববর্তী দশসপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেছেন।
ধারা৪৬। প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার এবং প্রদানের দায়িত্ব।
(১) প্রত্যেক মহিলা শ্রমিকতার মালিকের নিকট হতে তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যবহিত পূর্ববর্তী আটসপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আটসপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবার অধিকারী হবেন, এবং তার মালিকতাকে এই সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, কোন মহিলা উক্ত রূপ সুবিধা পাবেন না যদি না তিনি তার মালিকের অধীন তার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পূর্বে অন্য ছয় মাস কাজ করে থাকেন।
(২) কোন মহিলাকে উত্তরূপ সুবিধা প্রদেয় হবে না যদি তাহার সন্তান প্রসবের সময় তাহার দুই বা ততোধিকসন্তানজীবিতথাকে, তবেএক্ষেত্রেতিনিকোনছুটিপাবারঅধিকারীহলেতাপাবেন।
ধারা-৪৮ প্রসূতিকল্যাণ সুবিধার পরিমান
(১) এই আইনের অধীন সে প্রসুতিকল্যান সুবিধা প্রদেয় হবে উহা উপ-ধারা (২) এ উল্লেখিত পন্থায় গণনা করে দৈনিক সাপ্তাহিক বা মাসিক, প্রাপ্ত মোট মজুরিকে উক্ত সময়ে তার মোট প্রকৃত কাজের দিনগুলো দ্বারা ভাগ করতে হবে।
(২)উপ-ধারা (১) এর প্রয়োজনে দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক গড় মজুরি গণনার জন্য সংশ্লিষ্ট মহিলা কর্তৃক এ অধ্যায়ের অধীন নোটিশ প্রদানের অব্যবহিত পূর্ববর্তী ৩ মাসে তার প্রাপ্ত মোট মজুরিকে উক্ত সময়ে তার মোট প্রকৃত কাজের দিন গুলি দ্বারা ভাগ করতে হবে।
ধারা৪৯। মহিলার মৃত্যুর ধারা-৪৮ ক্ষেত্রে প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা প্রদান।
(১) এই অধ্যায়ে অধীন প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী কোন মহিলা সন্তান প্রসবকালে অথবা তার পরবর্তী আটসপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে মালিক, শিশু সন্তানটি যদি বেঁচে থাকে, যেব্যক্তি শিশুর তত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাকে, এবং যদি শিশুসন্তান জীবিত না থাকে তাহলে এই অধ্যায়ে অধীন মহিলার মনোনীত ব্যাক্তিকে অথবা কোন মনোনীত ব্যক্তি না থাকলে মৃতমহিলার আইনগত প্রতিনিধিকে উত্তরূপ সুবিধা প্রদান করবেন।
(২) যদি উক্তরূপ কোন মহিলা প্রসূতি কল্যাণসুবিধা পাওয়ার অধিকারী হওয়ার সময়সীমার মধ্যে কিন্তু সন্তান প্রসবের পূর্বে মারা যান, তাহলে মালিক উক্ত মহিলার মৃত্যুর তারিখ সহ তৎপূর্ববর্তী সময়ের জন্য উত্তরূপ সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন, তবে ইতিমধ্যে প্রদত্ত উক্ত রূপ সুবিধা যদি প্রদেয় সুবিধা হতে বেশী হয়, তাহলেও তা আর ফেরত নিতে পারবেন না, এবং মহিলার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত যদি মালিকের নিকট এই বাবদ কিছু পাওনা থাকে, তাহলে তিনি এই অধ্যায়ের অধীন মহিলার কোন মনোনীত ব্যক্তিকে, অথবা কোন মনোনীত ব্যক্তি না থাকলে, তার আইনগত প্রতিনিধিকেতা প্রদান করবেন।
ধারা-৫০।কতিপয় ক্ষেত্রে চাকুরির অবসানে বাধা
যদি কোন মহিলার সন্তান প্রসবের পূর্ববর্তী ৬ মাস এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী ৮ সপ্তাহ মেয়াদের মধ্যে তাকে চাকুরি হইতে ডিসচার্জ, বরখাস্ত বা অপসারণ করার জন্য অথবা তার চাকুরি অন্যভাবে অবসানের জন্য মালিক কোন নোটিশ বা আদেশ প্রদান করনে, এবং উক্তরূপ নোটিশ বা আদেশের যদি যথেষ্ট কোন কারণ না থাকে তাহলে, এই নোটিশ বা আদেশ প্রদান না করা হলে এই অধ্যায়ের অধীন সংশ্লিষ্ট মহিলা যে প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা পাবার অধিকারী হতেন, তা হতে তিনি বঞ্চিত হবেন না।
লেখক পরিচিতি
নাজমুন সাকিব ইতি
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়