মুসলিম পারিবারিক আইনে উওরাধিকারে নারীদের অধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বা সুষ্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মা, স্ত্রী , কন্যা , পুত্রেরকন্যা, দাদী, বোন বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রীয় বোন অধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বা সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির মা ৩ ভাগে সম্পত্তি পেয়ে থাকেন।
যথাঃ
১। যদি মৃতব্যক্তির সন্তান, পুত্রের সন্তান অথবা দুই বা ততোধিক ভাই বা বোন ( পূর্ণ বা বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয়) থাকে। তবে মা মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ(১/৬)পাবেন।
ধরুন, রহিম তার মাকে , ১ ছেলে ও ২ মেয়েকে রেখে মারা গেলো। রহিমের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ একর।
সুতরাং এখানে তার মা তার মোট সম্পত্তির ১/৬ ভাগ পাবে।
২। যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি এবং একের অধিক ভাই ও বোন না থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির মা মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন।
৩। যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি এবং একের অধিক ভাই ও বোন না থাকে । যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী এবং বাবা থাকে। তাহলে স্বামী বা স্ত্রীকে অংশ দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন।
স্ত্রী তার মৃত স্বামীর সম্পত্তি ২ ভাবে পেয়ে থাকেন। যথাঃ
১। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে তবে স্ত্রী স্বামীর মোট সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন।
২। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকে তবে স্ত্রী স্বামীর মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন।
মৃত ব্যক্তির কন্যা ৩ ভাবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পেয়ে থাকে। যথাঃ
১। যদি মৃত ব্যক্তির একজন কন্যা থাকে, তবে সে মোট সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) পাবে।
২। যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা থাকে, তবে সব কন্যা একত্রে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবে।
৩। যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা উভয়েই থাকে, তবে পুত্র যে পরিমাণ সম্পত্তি পাবে, কন্যা তার অর্ধেক পাবে।
মৃত ব্যক্তির পুত্রের কন্যা নিম্নলিখিতভাবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পাবে। যথাঃ
১। যদি মৃত ব্যক্তির কন্যা থাকে, তবে মৃত ব্যক্তির পুত্রের কন্যা কোনো সম্পত্তি পাবে না।
২। মৃত ব্যক্তির একটিমাত্র কন্যা থাকলে মৃত পুত্রের কন্যাগণ ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবে।
৩। যদি মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান বা মৃত পুত্রের পুত্র না থাকে এবং পুত্রের কন্যা একজন হলে সম্পত্তির দুইভাগের এক ভাগ (১/২) পাবে।
৪। যদি মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান বা পুত্রের পুত্র না থাকে এবং পুত্রের কন্যা একাধিক হলে সকলে মিলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগে (২/৩) পাবে।
৫। মৃত ব্যক্তির পুত্রের পুত্র বা তার পুত্র থাকলে, পুত্রের কন্যাগণ পুত্রের সাথে আসাবা ( রেসিডিউয়ারি) হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্ত হবে এবং কন্যা, পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে।
দুই ভাগে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি দাদী/নানী পেয়ে থাকে। যথাঃ
১। দাদী/ নানী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ৬ ভাগের ১ ভাগ পেয়ে থাকে।
২। মৃত ব্যক্তির পিতা বা মাতা জীবিত থাকলে নানী বা দাদী কোন সম্পত্তি পাবে না।
বোনের অংশ :
মৃত ব্যক্তির পিতা, পুত্র , পুত্রের-পুত্র থাকলে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে বোন কোনো অংশ পাবেন না। এদের অবর্তমানে তিন ভাগে সম্পত্তি পেয়ে থাকেন। যথাঃ
১। যদি মৃত ব্যক্তির একজন বোন থাকে তবে মোট সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) পাবেন।
২। যদি মৃত ব্যক্তির দুই বা ততোধিক বোন থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবেন।
৩। যদি মৃত ব্যক্তির বোনের সাথে কোনো সহোদর ভাই থাকে তাহলে বোন আসাবা হিসেবের ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির কন্যাদের সাথে কিংবা পুত্রের কন্যার সাথে সহোদর বোন আসাবা হিসেবেও অবশিষ্ট অংশ পায়।
বৈমাত্রেয় বোন:
বৈমাত্রেয় বোন মৃত ব্যক্তির পিতা, পুত্র , পুত্রের-পুত্র অবর্তমানে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশীদার হয়। যেমনঃ
১। সহোদর বোন না থাকলে একজন হলে দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) পাবেন।
২।সহোদর বোন না থাকলে দুই বা ততোধিক হলে তিনভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবে।
৩। একজন সহোদর বোনের সাথে ১/৬ অংশ এবং মৃত ব্যক্তির কন্যা বা পুত্রের কন্যার সাথে বৈমাত্রেয় বোনেরা আসাবা হয়।
বৈপিত্রীয়
বোন:
বৈপিত্রীয় বোনেরাও মৃত ব্যক্তির পিতা, দাদা, সন্তান, সন্তানের সন্তানের অবর্তমানে তার সম্পত্তের অংশীদার হয়। যেমনঃ
১। একজন হলে মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
২। দুই বা ততোধিক হলে থাকলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বৈপিত্রীয় ভাই বৈপিত্রীয় বোনদের দ্বীগুণ পায় না, একই পরিমাণ পায়।
লেখক পরিচিতি
নাজমুন সাকিব ইতি
শিক্ষার্থী - আইন বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়