×

মানুষের ১৮ টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার হলো আইনে আশ্রয় লাভের অধিকার।  বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ নং এ বলা হয়েছে আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

 

তবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার টি নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন বা দাখিল করতে হবে না হলে এই অধিকারটি তামাদি হয়ে যাবে তামাদি আইন, ১৯০৮ অনুযায়ী। তামাদি আইনের ধারা-৩ এ বলা হয়েছে তামাদি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মোকদ্দমা, আপীল বা আবেদন রুজু, দায়ের বা দাখিল করা হয়, তাহলে বিবাদী পক্ষ তামাদির প্রশ্ন উপস্থাপন না করলেও উক্ত মোকদ্দমা, আপীল বা দরখাস্ত খারিজ মর্মে পরিগণিত হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যদি আদালত বন্ধ অবস্থায় তামাদী সময়সীমা পার হয়ে যায় তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কি করবে? তামাদি আইন,১৯০৮ এর ৪ নংধারায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। ৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আদালত বন্ধ অবস্থায় কোন মোকদ্দমা, আপীল বা আবেদনের জন্য নিদির্ষ্ট সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালত যেদিন খুলবে সেদিন উক্ত মোকদ্দমা, আপীল বা আবেদনের দাখিল বা দায়ের করা যাবে।

ধরি, ‘ক’ ব্যক্তির মামলার তামাদী সময়সীমা শনিবারে শেষ হয়ে যাবে এবং সেদিন আদালতে সরকারী বন্ধ। ‘ক’ ব্যক্তি তার মামলাটি রবিবারে সুতরাং যেদিন আদালত খুলবে সেদিন দায়ের করতে পারে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে একবার তামাদি সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে কি কোনো ব্যক্তি তার অধিকারটি পুরাপুরি হারিয়ে ফেলবে?

উওর হচ্ছে না, কেননা নিদির্ষ্ট তামাদির সময়সীমা অতিক্রান্তের পর আপীল বা আবেদনটি গৃহীত হতে পারে যদি নিদির্ষ্ট সময় সীমার মধ্যে আপীল বা আবেদনটি দাখিল না করার যথেষ্ট কারণ ছিল মর্মে আপীলকারী বা আবেদনকারী আদালতের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।


১৯০৮ সালের তামাদি আইনের প্রথম তফসিলে বর্ণিত তামাদির  নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর কোন মামলার  আপীল বা দরখাস্ত আদালতে পেশ করা হলে উপযুক্ত কারন সাপেক্ষে সেই সময়সীমা  বর্ধিত করা যায় আর একে বলা হয় তামাদি মওকুফ বা বিলম্ব মওকুফ । বিলম্ব মওকুফ করা হলে তামাদির কারণে  অগ্রহনযোগ্য হয়ে পড়া  অর্থাৎ বারিত মোকদ্দমা গ্রহন হতে পারে। 


১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৫ ধারার কতিপয় ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ বৃদ্ধিকরণ সম্পর্কে আবেদন করা যায়। যে সকল বিলম্ব মওকুফের আবেদন করা যায় , তা নিম্নরূপ:

(১) আপীল মোকদ্দমা

(২) রিভিউ দরখাস্ত

(৩)রিভিশন দরখাস্ত 

(৪)আপীল করার অনুমতি প্রার্থনার দরখাস্ত এবং

(৫) অন্য কোন আইনে কোন দরখাস্ত যেখানে তামাদি আইনের ৫ ধরা প্রযোজ্য


১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী আদালত  স্বীয় বিবেচনাধীন ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল হয়ে যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে না আসতে পারার যথেষ্ট কারণ ছিল, তাহলে আদালত মওকুফ করতে পারেন। যথেষ্ট কারন বলতে সাধারণত অসুস্থতা,কারাবাস,সরল বিশ্বাসে ভুল, দারিদ্রতা, কৌসুলীর ভুল,আইনের ব্যাপারে অজ্ঞতা, ভুল আদালতে শুনানী ইত্যাদি বুঝায়। 


একজন দরখাস্তকারী বা প্রার্থীকে মওকুফের জন্য সাধারণত আদালতকে যা দেখাতে হয়:

(১) তিনি যথেষ্ট এবং যথোপযুক্ত কারণে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আপীল বা দরখাস্ত দাখিল করতে পারে নাই। 

(২) তার কোনরূপ অবহেলা  বা গাফলতি ছিল না

(৩) তার তেমন কোন গুরতর ত্রুটি ছিল না এবং 

(৪) অবহেলাবশ:ত উক্ত ত্রুটি করেন নাই।


তবে উক্ত ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে আপীলকারী, আবেদনকারী হাইকোর্টবিভাগের কোন আদেশ ,প্রথা বা রায়ের মাধ্যমে তামাদির সময়সীমা গণনা বা নির্ধারণে বিভ্রান্ত হলে তা বর্তমানধারা মোতাবেক যথেষ্ট কারণ মর্মে পরিগণিত হবে।


Nitya Gopal vs. Binod Behari Saha; 29 DLR 259-বিলম্ব মওকুফের জন্য এডভোকেটের ত্রুটি পূর্ণ পরামর্শ একটা উত্তম অজুহাত কিংবা কারণ হতে পারে। সাধারণ মতবাদ অনুসারে ভুল পরামর্শের পরিণতি কিংবা ফল থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয় প্রতিকার পাবার অধিকারী না হলেও আইনের ধারা ৫-এর অধীনে কোন কোন বিশেষ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। সুবিধা যথা কোন এডভোকেট কর্তৃক প্রদত্ত ভুল পরামর্শ একটি যথেষ্ট কারণ হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।


Abdul Halim vs. Asabuddin; 20 DLR 506- অপর্যাপ্ত কোর্ট ফি সম্বলিত সময়মত আপীল রুজু করে বাকী কোর্ট ফি এর জন্য সময়ের প্রার্থনা করা হলে উহা মঞ্জুর হয় না। পরবর্তীতে বাকি কোর্ট ফি জমা দিয়ে ধারা ৫ অনুসারে এক আবেদনপত্রে বিলম্ব মওকুফের জন্য প্রার্থনা প্রদান করা হলে আদালত দেখেন যে বিলম্ব মওকুফের প্রার্থনাটি যুক্তিযুক্ত বটে।


Sayed Barkurdar vs. Syed Mathakli Chowdhury; 25 DLR 203-আইনের অজ্ঞতা যা এমন অবস্থা সহিত সংযোজিত যে সরল বিশ্বাস অথবা সচেতনতার অভাব নির্দেশ করেনা তা বিলম্ব মওকুফের জন্য পর্যাপ্ত কারণ হিসাবে ব্যবহার করা যায়।



Province of East Pakistan vs. Md. Habibur Rahman; 25 DLR 254- আইন সম্বন্ধে মূর্খতা কিংবা অজ্ঞতা সময়কাল বৃ্দ্ধির ক্ষেত্রে কোন উপযুক্ত গ্রাউন্ড নয়। তবে অবশ্য মওকুফ সত্যিকার ভাবে গ্রহণযোগ্য যথেষ্ট কারণ থাকলে হতে পারে।

সুতরাং নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা বা আবেদন না করলে আপনি আপনার অধিকারটি হারিয়ে ফেলতে পারেন । আইনে একটা মেক্সিম রয়েছে, “The law assists only those who are vigilant, and not those who sleeps over their rights.”


লেখক পরিচিতি


নাজমুন সাকিব ইতি

শিক্ষার্থী- আইন বিভাগ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়